ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

চিকিৎসার নামে অরাজকতা লাগাম টানা অত্যন্ত জরুরি

অনলাইন ডেস্ক :::health

দুনিয়ার সর্বত্রই চিকিৎসাসেবাকে মহান পেশা হিসেবে দেখা হয়। চিকিৎসকরা কর্মজীবন শুরুর আগে তেমন শপথও নেন। কিন্তু বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবার ধরন দেখে তেমনটা মনে হয় না। কোনো চিকিৎসকের একটু নাম-পরিচিতি হলে রোগী বেড়ে যায়। সেই সুযোগে তিনিও ইচ্ছামতো ফি বাড়িয়ে দেন। অনেক চিকিৎসক তখন কম যোগ্যতার সহকারী রাখেন রোগী দেখার জন্য। কিন্তু ঠিকই ‘গলা কাটা’ ফি নেন। জানা যায়, কোনো কোনো চিকিৎসকের ফি দুই হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এর পরও টেবিলে সাজানো থাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ছাপানো তালিকা। প্রয়োজন হোক বা না হোক, সেই তালিকা ধরিয়ে দেন রোগীর হাতে। কারণ যত পরীক্ষা তত কমিশন। অভিযোগ আছে, বিশেষ কালির দাগ না থাকলে প্যাথলজি কেন্দ্রে কোনো পরীক্ষাই করা হয় না, কেবল রোগীর কাছ থেকে ফি নেওয়া হয় এবং তা পরে ভাগাভাগি করা হয়। অনেক চিকিৎসক সরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন না কিংবা রোগীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন বলেও অভিযোগ আছে। এসব করে রোগীদের বাধ্য করা হয় তাঁর ক্লিনিকে যেতে। এগুলো কি মহান পেশার লক্ষণ?

স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া জনগণের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্র জনগণের সেই মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করে। কিন্তু বাংলাদেশ যেন তার ব্যতিক্রম। এখানে দিনের পর দিন চিকিৎসার নামে অরাজকতা চললেও সরকার কোনো পদক্ষেপই নেয় না। এমনকি চিকিৎসকদের ফি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয় না। ফি নির্ধারণ না করার জন্য চিকিৎসকদের, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক চিকিৎসকদের চাপ থাকে প্রবল। বাধ্য হয়ে সরকারও তাদের খুশি রাখার চেষ্টা করে। এই চিকিৎসকদের যুক্তি হলো, অন্য পেশায় ফি নির্ধারিত নেই। তাহলে চিকিৎসা পেশায় ফি নির্ধারিত হবে কেন? অন্য পেশা মানুষের মৌলিক অধিকার নিয়ে নয়। সেখানে জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িত নয়। অন্যান্য পেশায় এত অল্প সময়ে এত বহুসংখ্যক মানুষকে সেবা দেওয়ারও সুযোগ থাকে না। অন্য পেশাজীবীরা ‘মহান পেশার’ শপথ নেয় না, নিজেদের মহান পেশার পেশাজীবী হিসেবে দাবিও করে না। এর পরও সরকার কেন তাদের এসব কুযুক্তিকে মেনে চলে, তা আমরা বুঝতে অক্ষম। সরকারের কি দায়িত্ব নয় দেশের সব মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা? রোগ নির্ধারণের জন্যই যদি ১০-২০ হাজার টাকা চলে যায়, তাহলে পরবর্তী চিকিৎসা মানুষ কিভাবে করাবে? রোগীদের শোষণের এই প্রক্রিয়া বাধাহীনভাবে চলতে থাকলে অচিরেই দেশের ৮৯-৯০ শতাংশ মানুষ চিকিৎসাসেবার বাইরে চলে যাবে। সরকার কি সেটাই চায়?

চিকিৎসাসেবা আর ১০টি বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মতো নয়—এই সত্যটি নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আশা করি, সরকার এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার পরিচয় দেবে।

পাঠকের মতামত: